জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগরীতে জমি নিয়ে দুই পক্ষ প্রকৃত মালিক দাবি করে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিবদমান দুই পক্ষই বিরোধপূর্ণ জমির প্রকৃত দাবিদার বলে দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিবদমান জমির উপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) কয়েকবার নির্বাচিত কাউন্সিলর মোঃ টুটল। সংবাদ সম্মলনে তিনি বলেন, ওয়ারিশ সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমার (সাবেক কাউন্সিলর টুটুল) ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন মোঃ সুজাউদ্দৌলা ও তার সহযোগীরা।

তিনি (কাউন্সিলর) বলেন, সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে মোঃ সুজাউদ্দৌলা নামে এক ব্যক্তি চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন। এর প্রতিবাদে সম্পত্তির প্রকৃত ওয়ারিশগণ আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্পত্তির ওয়ারিশ আবুল হোসেনের ছেলে মোজ্জামেল হক বাক্কার। সংবাদ সম্মেলনে সকল ওয়ারিশগণসহ বয়েন ওরফে মায়নুদ্দীনের ছেলে টুটুল ও শাহনাজ বেগম উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএনপিপন্থি ১৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর টুটুল আরও বলেন, তেরখাদিয়া মৌজার ১৫৬ নং খতিয়ান আর এস ১নং দাগের .৩৭ একর সম্পত্তি মকবুল মন্ডল, ময়েন উদ্দিন ও সুখিয়ন বেওয়া নামের জমি ওয়ারিশগণের অনুমতি ছাড়াই বন্টননামা না করেই প্রতারণা করে মকবুল মন্ডল বিক্রি করেন। দুই দফায় দুজনের নিকট বিক্রি করলেও তারা কেউ তাদের নামে খারিজ খতিয়ান করতে পারেননি। প্রথম দফায় ১৯৭৬ সালে মকবুল মন্ডল জমিটি অন্যান্য ওয়ারিশগণের অনুমতি ছাড়াই জামালের নিকট বিক্রি করেন। এরপর জামাল ওই জমি খারিজ খতিয়ান না করেই ১৯৭৯ সালে সোনাভানের নিকট বিক্রি করেন।

সোনাভান মারা গেলে তাঁর ওয়ারিশগণ ওই জমি সুজাউদ্দৌলার নিকট বিক্রি করেন। সুজাউদ্দৌলার নিকট বিক্রির পূর্বেই সোনাভানের ওয়ারিশগণ প্রতারণা আশ্রয় নিয়ে একটি ভুয়া খতিয়ান তৈরি করেন। অন্যান্য ওয়ারিশগণের অনুমতি না থাকায় প্রথম ক্রেতা খারিজ ও খতিয়াত করতে পারেনি। খারিজ খতিয়ান না থাকায় পানির দামে প্রতারক চক্র জমিটি ক্রয় করে নিজ নামে খারিজ, খতিয়ান করে নেয়।
এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। আমরা ওয়ারিশগণ এ সম্পত্তির মালিক। মামলা চলমান অবস্থায় সুজাউদ্দৌলা জোর পূর্বক এখন এ সম্পত্তিতে মাটি কেটে বিল্ডিং তৈরি করতে যাচ্ছেন। জমিটি এখনও আমাদের দখলে আছে।
সাবেক কাউন্সিলর আরও বলেন, জমিটি হাতিয়ে নিতে প্রকৃত মালিকদের বঞ্চিত করতেই তিনি নানাভাবে আমাদের হয়রানি করছেন।

গত ১৭ নভেম্বর তিনি একটি সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদা দাবির অভিযোগ তোলেন। আমি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে আমাদের সম্পত্তি ভূমি খেকোদের হাত থেকে মুক্তি পেতে আইনি সহায়তা চাই প্রশাসনের নিকট।

তিনি বলেন, জমির কাগজপত্র দেখে যদি মনে হয় আমরা ওই সম্পত্তির মালিক না তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর যদি আমরা প্রকৃত মালিক হয়ে থাকি বা ওয়ারিশ হয়ে থাকি তাহলে উক্ত প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক বলে দাবি করেন তিনি।

জমির মালিকানা অনুযায়ী মৃত কাশেম মন্ডল, মৃত বয়েন ওরফে মায়নুদ্দীন, মৃত আবুল মন্ডল, আরশাদ মন্ডলের ছেলে মেয়ে ওই সম্পত্তির প্রকৃত ওয়ারিশ। সাবেক কাউন্সিলর টুটুল মৃত বয়েন ওরফে মায়নুদ্দীনের ছেলে। ৪১ জন ওয়ারিশ ওই সম্পত্তির বর্তমানে মালিক। তাঁরা বিজ্ঞ আদালতে ২৯ জনের বিরুদ্ধে বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেছেন। ওই ২৯ জন ১৫৬ খতিয়ানের ১নং দাগের .৩৭ একর সম্পত্তি বাকী ৪১ জন ওয়ারিশকে বঞ্চিত করে জমিটি প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করেন। মৃত মকবুল মন্ডল বাকী ওয়ারিশগণের অনুমতি ছাড়াই জমিটি দুই দফায় বিক্রি করলেও তাঁরা খারিজ খতিয়ান না করতে পারায় সুজাউদ্দৌলা জমিটি ক্রয় করে। সে জমিটি ক্রয় করে ওয়ারিশ শাহনাজ বেগমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করে তাকে দমন করার চেষ্টা করেন। এরপর ওই জমিতে জোরপূর্বক ভেকু নামিয়ে কাজ করতে গেলে ৪১ জন ওয়ারিশ বাধা প্রদান করেন।

অন্যদিকে সুজাউদ্দৌলা পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে নিজের পক্ষের কাগজপত্র দেখিয়ে বলেন, নগরীর উপকণ্ঠে তেরখাদিয়া মৌজার ১৫৬ নং আরএসএস খতিয়ানের ১ নং দাগে ১২৮০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। তিনি জায়গাটির মূল মালিক মকবুল মন্ডল, ময়েন উদ্দীন ও সুখিয়ান বেওয়ার ওয়াররিশদের নিকট থেকে পৃথক পৃথক সময়ে ক্রয় করেন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৬ সালে ওয়ারিশদের নিকট থেকে জামাল উদ্দীন, ১৭৭৯ সালে জামাল উদ্দীনের নিকট থেকে সোনাভান এবং সোনাভানের ওয়ারিশের নিকট থেকে ২০২১ সালে তিনি (সুজাউদ্দৌলা) জমিটি ক্রয় করেন।
এরপর তিনি আরডিএর নিকট থেকে বৈধ কাগজপত্র দাখিল করে ১৫ তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে ২০২৩ সালের শেষ দিকে ১৫২টি পাইলিং করেন। এরপর সাবেক কাউন্সিলর মোঃ টুটুল নিজেকে এই জমির মালিক দাবি করে আদালতে অভিযোগ করেন এবং ভবন নির্মান কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করেন। তিনিই ক্রয়সূত্রে জায়গাটির বৈধ মালিক বলেও জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button