রাজশাহীতে সাংবাদিকদের সাথে আশার সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কিত মতবিনিময় অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আত্মনির্ভর ও স্ব-অর্থায়িত ক্ষুদ্রঋণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আশা’র সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) বেলা ১১টায় নগরীর উপশহর এলাকার একটি হোটেলের হলরুমে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। আশার রাজশাহী ডিভিশাল ম্যানেজার মোঃ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি শ.ম সাজু ও আশার জুনিয়র এ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম, টিম-সি) মীর আনিছুর রহমান।

সভা সঞ্চালনা করেন এডিশনাল ডিভিশনাল ম্যানেজার মোঃ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়া সিনিয়র এডিশনাল ডিভিশনাল ম্যানেজার মোঃ আশরাফ ফারুক, সিডিএম মোঃ আব্দুল লতিফ, আরএম, এসই, বিএমসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানানো হয়, আশার প্রাতিষ্ঠানিক কর্ম-প্রয়াস চার দশকের বেশী সময় ধরে চলছে। আশার কর্মসূচীর মূল উদ্দেশ্য ও অভিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমানের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তি। সমাজের দরিদ্র ও বৈষম্যের শিকার মানুষদের বিশেষত নারীদের সংগঠিত করে সচেতন করা এবং অর্থনৈতিক সেবার মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আশা নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা’র ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সহায়তায় দেশের লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। আশা’র বিশেষত্ব হল- আত্মনির্ভর ও স্ব-অর্থায়িত, নিজস্ব সম্পদ নির্ভর ও অনুদান মুক্ত, সর্বক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির কঠোর অনুসরণ, উদ্বৃত্ত আয় থেকে CSR (কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সিবিলিটি) কার্যক্রম পরিচালনা, এশিয়া ও আফ্রিকার ১৩টি দেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম উন্নয়নে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা। “আশা”র সকল কার্যক্রম শতভাগ ডিজিটাল এবং ডিসেম্বর ২৩ হতে “আশা”র কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল ব্রাঞ্চ (৩০৭৩টি) অনলাইনে কার্যক্রম এর আওতাভুক্ত হয়েছে।

আশা’র আর্থিক সেবার মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ, এমএসএমই ঋণ, কৃষি ঋণ, সঞ্চয়, রেমিটেন্স। সমগ্র বাংলাদেশে ৭১ লাখ পরিবার আশা’র সুফল ভোগ করছে। সিএসআর কার্যক্রম (কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সিবিলিটি)’র মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সহায়তা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সহায়তা, উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি, ফিজিওথেরাপি সেবা, শীতবস্ত্র বিতরণ, স্যানিটেশন। আশা-বিশ্ববিদ্যালয় ও আশা-ম্যাটস এ গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ বৃত্তির মাধ্যমে লেখা-পড়ার সুযোগ রয়েছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে, করোনাকালীন ত্রাণ সহায়তা, করোনা পরিবর্তী ১হাজার কোটি টাকা সার্ভিস চার্জ মওকুফ করা হয় এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের বৃত্তি দেয়া হয়েছে। আশা’র ঋণগ্রহীতা মারা গেলে ঋণ মওকুফ এবং দাফন-কাফনের নগদ ৫০০০ টাকা সহায়তা প্রদান, সদস্যদের চিকিৎসা সহায়তা, বয়সজনিত কারণে অফেরতৎ যোগ্য ১৫০০০ টাকা এককালীন অবসর ভাতা প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য যে, রাজশাহী বিভাগে ২২৬টি ব্রাঞ্চের মাধ্যমে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬০ জনকে ৩ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা ঋণবিতরণ করা হয়েছে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩হাজার ৪৮১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা-রাজশাহী বিভাগের ১ হাজার ৬৯টি কেন্দ্রে ৩৫ হাজার ৪৩৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আশার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১ হাজার ৪৬৮ জন সদস্যের মাঝে ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা স্যানিটেশন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৪৯ হাজার ৩৫৬ জন রোগীকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। ২টি ফিজিওথেরাপী সেন্টারের মাধ্যমে ৮ হাজার ৩৪৫ জন অপারেশন বিহীন হাঁটু-কোমর ঘাড়-হাতে ব্যাথা, প্যারালাইসিস, অথ্রাইটিস, ডিস্ক প্রলেপসহ সকল প্রকার জয়েন্টের সমস্যার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সদস্যর বীমাদাবি পরিশোধ করা হয়েছে ৩৮৩৪জন ১২,৩৮ কোটি টাকা, সদস্যকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে ১৯৬৮জন ৪৯.৮৯লক্ষ টাকা। সদস্যর মৃত্যুজনিত দাফন-কাফনে ৫০০০ টাকা করে ৯৩২জনকে ৪৬ লক্ষ টাকা সহায়তা প্রদান, ৫৫ জনকে ৮,২৫ লক্ষ টাকা এককালীন অবসর ভাতা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নিকট শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে ১৬০০টি।

রাজশাহী জেলায় (রাজশাহী ও পুঠিয়া) ৭৫টি ব্রাঞ্চের মাধ্যমে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ১.৭৬ লক্ষ জনকে ১০১০,৬০ কোটি টাকা ঋণবিতরণ করা হয়েছে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১৬৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। আশা-রাজশাহী জেলায় ৩৪৫টি কেন্দ্রে ১০,৮০১জন শিক্ষার্থী নিয়ে আশা-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে স্যানিটেশন ঋণ বিতরণ ২৬৬জন ৪১.৬৪ লক্ষ টাকা, ০১টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৫৫৯১জন রোগী সেবা গ্রহণ করেন। ০১টি ফিজিওথেরাপী সেন্টারের মাধ্যমে ৪৩০০জন অপারেশন বিহীন হাঁটু-কোমর-ঘাড়-হাতে ব্যাথা, প্যারালাইসিস, আথ্রাইটিস্ট ডিস্ক প্রলেপসহ সকল প্রকার জয়েন্টের সমস্যার চিকিৎসা গ্রহণ করেন। সদস্যর বীমাদাবি পরিশোধ করা হয়েছে ১৩০০জন ৪.১৬ কোটি টাকা, সদস্যকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে ৯০৯জন ১৩.৫৪ লক্ষ টাকা। সদস্যর মৃত্যুজনিত দাফন-কাফনে ৫০০০ টাকা করে ৩২১জনকে ১৬.০৫ লক্ষ টাকা সহায়তা প্রদান, ১৪ জনকে ২.১০ লক্ষ টাকা এককালীন অবসর ভাতা প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নিকট শীতবস্ত্রে বিতরণ করা হয়েছে ৪০০টি। এছাড়াও সরকারী সকল দিবসে আশা’র প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button