এক যুগ ধরে হাইড্রো গ্রাফিক জরিপ ছাড়াই বালু মহাল ইজারা! 

রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ও পরিবেশ প্রকৃতি হুমকির মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের কাছে নিয়মনীতি বহির্ভূত বালু উত্তোলন করায় শহর রক্ষা বাঁধ সহ নদী প্রবাহ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন পড়েছে। এদিকে দীর্ঘ এক যুগ ধরে হাইড্রো গ্রাফিক জরিপ ছাড়াই বালু মহাল ইজারা দিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।
রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১১ এর তিন নম্বর ধারা অনুযায়ী হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ না করেই বালি উত্তোলন করার ফলে শহররক্ষা বাঁধ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। তাছাড়া নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ, গতিপথ, জলজ প্রতিবেশ  ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও  প্রকৌশলী ও পরিবেশবিদগণ জানিয়েছেন। রাজশাহীর পবা উপজেলার চরশ্যামপুর ও দিয়ার খিদিরপুরে দীর্ঘ ১ যুগের বেশী সময় ধরে অবৈধ বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
রাহেল সরদার নামে এক ব্যক্তির সরকারের বিপক্ষে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমাল-২০১১ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ না করে না করে ইজারা দেয়ায় এক রিট পিটিশনের জবাবে রাজশাহীর ডিসি (সাবেক) শামীম হোসেন লেখেন, বালুমহালসমূহ ইজারা প্রদানের মাধ্যমে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমানে রাজস্ব আয় করে থাকে। উক্ত বালুমহাল থেকে উত্তোলনকৃত বালু দ্বারা মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভূক্ত আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহনির্মাণসহ রাজশাহী জেলার সরকারি ও বেসরকারি অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয়ে থাকে। সেখানে বলা হয় ইজারাদার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী কর্তৃক হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের সুপারিশ করা হয়নি। কিন্তু রাজশাহী জেলায় বিআইডব্লিউটিএর নির্ধারিত নৌ-বন্দর সীমানা বা নির্ধারিত নৌপরিবহনের কোন কোন রুট না থাকায় এবং উক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যালয় না থাকায় বালুমহাল ইজারা প্রদান বা বালু উত্তোলনের জন্য বিআইডব্লিউটিএর হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনার সুপারিশ না থাকায় এখানে হাইড্রোগ্রাফিক চার্টের ভিত্তিতে বালু উত্তোলনের নিনিত্ত কখনও ড্রেজিং এলাকা চিহ্নিতকরণের প্রয়োজন হয়নি।
অন্য একটি  রিট মামলার আদেশে হাইকোর্ট পদ্মার তালাইমারী ঘাট, কাজলা ও বাজেকাজলা ঘাট ব্যবহার করে বালু উত্তোলন, মজুত ও পরিবহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা করেছিলেন। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসনও অবৈধ তালাইমারী ঘাটের ওপর সাইনবোর্ড টানিয়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছিল। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় ইজারাদার পরিবর্তন করে ঐ সাইনবোর্ড থাকা অবস্থায় আবারো বহাল হয় বালু মজুদ ও পরিবহন।
এ বিষয়ে প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব রাজশাহীর সম্পাদক রওশন আলী খান বলেন, অবিলম্বে তা বন্ধ করা উচিৎ। কারণ অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর প্রবাহ নষ্ট হয়, জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।
লেখক ও নদী গবেষক পরিবেশবিদ মাহাবুব সিদ্দিক বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে শহর এবং শহর রক্ষা বাঁধের কাছাকাছি কোথাও কোন বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না, এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত বিশেষজ্ঞদের দিয়ে হাইড্রোগ্রাফিক টেস্ট করে সীমানা নির্ধারণ করা উচিৎ।
রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের আশপাশে বৈধ বা অবৈধ সকল প্রকার উত্তোলন ও খনন বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। এরকম চলতে থাকলে যে কোন সময় বালু ধ্বস, ভূমি ধ্বস এবং শহর রক্ষা বাঁধ ধ্বসে যেতে পারে। আমি আরও সতর্ক করে বলতে চাই, এরকম বড় যে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট  প্রশাসন দায়ি থাকবে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহীর সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর একটি কমিটি করা হয়েছিল ; পদ্মা নদীর ভূমি উদ্ধার করে নদী শাসন এলাকা তৈরী করা এবং পরে অদুরে ড্রেজিং করে নদী পথ সচল রাখা এবং সেই বালু উত্তোলন করা। বালু উত্তোলন তো পরের কথা, আগের কাজগুলো আগে করতে হবে, না হলে এ শহর ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button