উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য সুরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য অধিকার সুরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রাজশাহী মহানগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত আঞ্চলিক খাদ্য অধিকার সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বেলেন।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, খাদ্য অধিকার কেবল ক্ষুধামুক্ত থাকার নিশ্চয়তা নয়; বরং নিরাপদ, মানসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার পাওয়ার অধিকারও এর অন্তর্ভুক্ত। তারা উল্লেখ করেন, ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ও ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তিতে খাদ্য অধিকারের স্বীকৃতি থাকলেও বাংলাদেশে এখনো এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আইনগত কাঠামো নেই। যদিও সংবিধানে খাদ্য, পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যের বিষয়কে মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা শাখা, দিনের আলো হিজড়া সংস্থা এবং ওয়েব।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে সম্মেলনে বক্তারা জানান, দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে, যেখানে প্রায় ১৯.৯৮ শতাংশ পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। রাজশাহী বিভাগেও ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ খাদ্য অনিরাপত্তায় ভুগছেন।

সম্মেলনে বলা হয়, খরা, ভূগর্ভস্থ পানির ঘাটতি, আবাদি জমি হ্রাস ও কৃষিক্ষেত্রে সংকট এ অঞ্চলের কৃষি ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, ফলে খাদ্য উৎপাদনও কমছে। অন্যদিকে দ্রুত নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও আবাসন প্রকল্পের কারণে প্রতি বছর প্রায় অর্ধ শতাংশ হারে আবাদি জমি কমছে রাজশাহীতে। এতে কৃষি থেকে আয় কমে গিয়ে কৃষকরা শহরমুখী হচ্ছেন, যার ফলে মৌসুমি বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও সামাজিক সংকট বাড়ছে।

বক্তারা জানান, কৃষকরা অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ফাঁদে পড়ছেন। মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিতে বাধ্য হওয়ায় ফসল ব্যর্থ হলে ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। চলতি বছর রাজশাহী অঞ্চলে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।

আদিবাসী সাঁওতালসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও জীবিকার সংকট আরও প্রকট বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ায় তারা পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছেন না।

বক্তারা বলেন, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খাদ্য অধিকার রক্ষায় পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা জোরদার এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তা না হলে খাদ্য ঘাটতি ও দারিদ্র্যের কারণে এ অঞ্চলের মানুষ আরও বড় সংকটে পড়বে।

রাজশাহী জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি কল্পনা রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার এসএম রকিবুল হাসান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এএনকে নোমান, কৃষি কর্মকর্তা তাসনিয়া হক, সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদ সফিউদ্দীন, রাজশাহী জেলা কৃষকদলের সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্ত এবং উন্নয়নকর্মী এভারেস্ট হেমব্রোম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেসরকারি সংস্থা পরিবর্তনের পরিচালক রাশেদ রিপন।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button