অক্ষয় মৈত্রেয়’র নামে রাবি গ্রন্থাগারের নামকরনের দাবি
১৬৩ তম জন্মবার্ষিকীতে অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়'কে স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গৌরবময় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, ‘বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম’। আর এই মিউজিয়াম ‘ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়’র অক্ষয়কীর্তি’। তাঁকে সারথ্যে বরণ করেই নাটোর দিঘাপতিয়ার রাজপুত্র কুমার শরৎকুমার রায় প্রতিষ্ঠা করেন বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম। অক্ষয়কুমার দুই-দশক এই মিউজিয়ামের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমূল্য-প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ ও সঞ্চয় এবং ইতিহাস রচনা করে গেছেন। ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোরব থেকে এই মিউজিয়াম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান। তাই আমাদের আকুতি অক্ষয়কুমারের স্মৃতি রক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে আসুক। অবিভক্ত বাংলার সুবিখ্যাত ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ের নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নামকরণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রাণের দাবি জানাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মহান এই কাজটি করলে জাতীয়ভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আরও সমাদৃত হবে। প্রসঙ্গক্রমে আমরা বলছি যে, বঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে অক্ষয়কুমারকে স্মরণীয় করে রাখার পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে অবস্থিত ভারত সরকারের অর্থায়নে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়-এ ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মিউজিয়াম’ এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অক্ষয়কুমারের জীবনী গ্রন্থ, তাঁর ইংরেজি রচনা নিয়ে আরও একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অথচ রাজশাহীতেই তাঁর নাম আমরা যোগ্য মর্যাদায় স্থাপন করতে পারি নাই।’
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বরেন্দ্র ইতিহাস পরিষদ’ রাজশাহী আয়েজিত ‘অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় : জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তাগণ উপরিউক্ত দাবি ও অভিমত জানান। বরেন্দ্র ইতিহাস পরিষদের নগরীর কুমারপাড়া কার্যালয়ে শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যার পর সুলতানুল ইসলাম টিপুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মো. সফিকুল ইসলামের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ, শিক্ষাবিদ দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, অধ্যাপক অসিত সাহা প্রমুখ। সভা শুরুর আগে অক্ষয়কুমারের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শিশু-কিশোররা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বরেন্দ্র ইতিহাস পরিষদের পক্ষে ‘অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়ের বাসভবনে কাজী নজরুল ইসলাম’ শীর্ষক মো. সফিকুল ইসলাম রচিত স্মারকপত্র প্রচার করা হয়। নগরীর অনেক বিশিষ্ট নাগরিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণযোগ্য যে, রাজশাহীর যে ক’জন কৃতিসন্তান তাঁদের বহুমুখী কর্মপ্রতিভা ও পাণ্ডিত্যে দিয়ে বরেন্দ্রভূমি, অবিভক্ত বাংলা, ভারতবর্ষ, এমনকি বিশ্বব্যাপী নন্দিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়। ঊনিশ শতকের শেষ-দশক এবং বিংশ শতকের প্রথম তিন-দশক অক্ষয়কুমার ছিলেন বাংলার প্রধান ইতিহাসবিদ। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বাংলার ইতিহাসচর্চা, ইতিহাস রচনা ও প্রতœতাত্ত্বিক খননের তিনিই পথিকৃৎ। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় প্রায় তিনশত প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও বহু গ্রন্থ রচনা করে বাংলার ইতিহাসচর্চা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী ‘স্বদেশী আন্দোলন’কে জাগিয়ে তোলেন। অক্ষয়কুমারের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘সিরাজদ্দৌলা’। এই গ্রন্থ রচনা করে তিনি নবাব সিরাজদ্দৌলাকে কলঙ্কমুক্ত করে বাঙালি জাতিকে দায়মুক্তি দিয়েছেন। অক্ষয়কুমারের পরিচালনায় কুমার শরৎকুমার রায়ের অর্থায়নে পাহাড়পুরের সোমপুর মহাবিহার খননের উদ্বোধন হয় ১৯২৩ সালের ১ মার্চ এবং এটিই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বাংলার প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ১৮৬১ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।