রাজশাহীর বৈষ্ণব সভা মন্দির রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র গণকপাড়ায় অবস্থিত বৈষ্ণবসভা মন্দির নির্মাণে বাঁধা প্রদান এবং হামলা, মামলা ও হুমকির প্রতিবাদে বৈষ্ণব সভা মন্দির পরিচালনা কমিটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। গতকাল রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে রাজশাহী ধর্মসভায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখত বক্তব্য পড়ে শোনান মন্দির কমিটির সভাপতি অশোক কুমার সাহা। তিনি বলেন, বোয়ালিয়া থানার রামপুর মৌজার আর এস ৩০৭ খতিয়ানের ৪৯ ও ৫০ দাগে ০.০৬১৮ একর জমির উপর ‘বৈষ্ণব সভা মন্দির’। আর এস ৩০৭ রেকর্ড অনুযায়ী মালিক বৈষ্ণব সভা সম্প্রদায়ের পক্ষে বজেন্দ্র মোহন মৈত্র।
তিনি বলেন, সম্প্রতি পূর্বপার্শ্বের বহুতল ভবন নির্মাণের সময় মন্দিরটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং মূল অবকাঠামো সম্পূণ ভেঙ্গে পড়ে। ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘মুক্তা হোমসে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়দুল মুকতাদির (মুক্তা) নিজ অর্থে মন্দিরের অবকাঠামো নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। এ বিষয়ে ৩০ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মন্দির কমিটির সাথে তার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং নতুন মন্দির নির্মাণের জন্য পরিচালনা কমিটি পুরাতন ভবন অপসারণ করেন। উল্লেখ্য মন্দিরের দক্ষিণ পশ্চিম অংশে ৬টি দোকানঘর আছে। তৎকালীন মন্দির কমিটি মন্দিরের ব্যয়ভার পরিচালনার জন্য ঐ দোকানঘর বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ভাড়া প্রদান করে। সম্প্রতি নতুন মন্দির নির্মাণের জন্য ভাড়াটিয়াগণদের চুক্তি অনুযায়ী দোকানঘর ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলে তারা অসম্মতি জানায় এবং ১০৭ ও ১৪৪/১৪৫ ধারায় মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের করে। পরে মামলাগুলো আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। উল্লেখ্য, ৬টি দোকানঘরের ১টির বিবাদী অরুন চাক্রবর্তী, রাজিব চক্রবর্তী ও মীরা চক্রবর্তী গং ৯৪৮২ নং জাল দলিলের মাধ্যমে নিজ নামে খারিজ করে। এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বোয়ালিয়া মামলা করেন। আদালত মন্দির কমিটির পক্ষে আদেশ দেন। বিবাদী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে আপীল করলে পুনরায় মন্দির কমিটির পক্ষে আদেশ হয়। এছাড়া বিবাদী অরুন চক্রবর্তী সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ২৪২/২৩ চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে মামলাটি ১১ আগস্ট ২০২৪ নামজুর হয় এবং ৯৪৮২ নং জাল দলিল সেভ কাষ্টডিতে রাখার আদেশ হয়।
এদিকে মন্দির কমিটি জানতে পারে, অরুণ চক্রবর্তী দোকানটি মেসার্স বিস্কুট বিপনীকে সাবলেট প্রদানের ষড়যন্ত্র করছেন। কমিটির সদস্যগণ ঘটনাস্থলে গিয়ে অরুণ চক্রবর্তীকে অন্যত্র ভাড়া না দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে বিবাদী ক্ষীপ্ত হয়ে ৪০/৫০ সহযোগী নিয়ে কমিটির সদস্য ও সম্প্রদায়ের লোকদের উপর হামলা ও মারধর করেন। এতে মন্দির কমিটির কয়েকজন সদস্য আহত হন। এরপর থেকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি মন্দির কমিটি বোয়ালিয়া থানায় ২টি অভিযোগ করেন। কিন্তু অদ্যাবধি পুলিশ প্রতিকার দূরে থাক মামলাও গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে উভয়পক্ষকে অভিযুক্ত করে কৌশলে ১১ জানুয়ারি ১০৭/১৭ মামলা করেছে। তদন্তের জন্য পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর মন্দির কমিটি পৃথক আবেদন করেন। পুলিশ কমিশনার বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও অদ্যাবধি সমাধান পাননি। বরং দোকানঘর ভাড়াটিয়ার হুমকি ও প্রশাসনের অসহযোগিতায় মন্দির কমিটি নিরাপত্তা হীনতায় দিন কাটাচ্ছেন এবং মন্দির স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পুলিশের নিরবতা, মামলা, হুমকিদাতা ও হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার এবং মন্দির রক্ষায় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান। সংবাদ সম্মেলনে মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহেশ চন্দ্র সরকার, সাংগঠনক সম্পাদক সনৎ কুমার সাহা, প্রচার সম্পাদক পাপ্পু দাস, সদস্য আকাশ কুমার দাস, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের রাজশাহী মহানগর সভাপতি অচিন্ত কুমার রায় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল সরকার উপস্থিত ছিলেন।