‘খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ হলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিতসহ অবৈধ চর্চাও বন্ধ হবে’

রাজশাহীতে অংশীজনদের এডভোকেসি সভায় বিএসটিআই মহাপরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এস এম ফেরদৌস আলম বলেছেন, ‘ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন ২০১৩ সালে পাস হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিএসটিআই ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এই আইন বাস্তবায়নে কাজ করছে। বোতলজাত ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত হলেও খোলা তেলে সম্ভব হয়নি। খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ হলে ভিটামিন ‘এ’ নিশ্চিতসহ কতিপয় ব্যবসায়ীর অবৈধ চর্চাও বন্ধ হবে। বিএসটিআই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয় ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা প্রদান করে।’ তিনি অংশীজনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলনকক্ষে বিএসটিআই ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ভোজ্যতেল ক্রয়-বিক্রয়ে স্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধে ব্যবসায়ী ও অংশীজনের এডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খোন্দকার আজিম আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশণার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, রাজশাহীর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। এছাড়া রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, রাজশাহী চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকুসহ বিএসটিআই পরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন বাজারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিনিধি ও ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীবৃন্দ অংশ নেন।

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিএসটিআই প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আবু সাঈদ। খোলা ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর দিক ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধে করণীয় বিষয়ক পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের লার্জ স্কেল ফুড ফরটিফিকেশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার ডাঃ রীনা রানী পাল। প্রেজেন্টেশনে তিনি ভোজ্যতেল পরিবহণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক ড্রামের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি বর্তমানে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেন। এসব নন-ফুড গ্রেড কেমিকেলের ড্রামগুলো অবিলম্বে বিকল্প প্যাকেজিংয়ে প্রতিস্থাপন করা উচিত। পাশাপাশি, ভিটামিন সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য স্বচ্ছ প্যাকেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি অভিহিত করেন। ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ এর ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ও সুশীল সমাজের সহায়তায় কেমিকেল ড্রামের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিশেষত, ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবের কারণে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে এবং তাই আগামীতে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ মিশ্রণের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এই উদ্যোগগুলো গ্রহণ করার মাধ্যেম ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যবান পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

কর্মশালায় রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, অনিরাপদ খোলা ভোজ্যতেলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। এখনই সচেতন না হলে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর ক্ষতিকর প্রভাব স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ব্যবসায়ীদের অস্বাস্থ্যকর ড্রাম ফুড-গ্রেড প্যাকেজিংয়ে প্রতিস্থাপন করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক নেতৃবৃন্দকে খুচরা বিক্রেতাদের তদারকি করতে হবে এবং ভোজ্যতেলের বাজার সুরক্ষিত রাখতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসটিআই মহাপরিচালক (গ্রেড-১) এস এম ফেরদৌস আলম আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে ড্রাম ও প্যাকেটজাত উভয় ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে। ড্রামজাত তেলের গুণগত মান মানদণ্ডের নিচে এবং এতে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি রয়েছে। অথচ ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে অধিকাংশ মানুষ ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সচেতনতামূলক সভার মূল প্রতিপাদ্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সকলেই সচেতন হয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বিএসটিআই এর গুরুত্বপূর্ণ দিক কর্মশালায় তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালা। স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে বিএসটিআই যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।

তিনি বাংলাদেশে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বিষয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি খোলা ভোজ্যতেল এর ক্ষতিকর দিক বর্ণনার পাশাপাশি প্যাকেটজাত ভিটামিন-‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের সুফল সম্পর্কে সভায় উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইনের আওতায় পিইটি বোতলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা গেলেও খোলা তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

সভাপতির বক্তব্যে খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেন, ভোক্তার স্বার্থে খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি বন্ধ করে প্যাকেজিং ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। ভোক্তার অধিকার ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা ও মননেও উন্নয়ন প্রয়োজন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কেমিকেল ড্রামে ভোজ্যতেল বিপণন বন্ধ এবং ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে। এ কাজে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button