রাজশাহীতে ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে সংবাদ প্রকাশের জেরে জনৈক প্রতারক আক্তারুল ইসলাম ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিকরা এ ঘটনায় শাহ মখদুম থানার ওসি’র যোগসাজশে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন৷

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর ) আরএমপি’র শাহ মুখ থানায় আখতারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির করা চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত ৬ সাংবাদিক হলেন, ফটো সাংবাদিক ফায়সাল আহম্মেদ, দৈনিক গণমুক্তি’র ব্যুরো প্রধান মাজহারুল ইসলাম চপল, আরটিভি’র ক্যামেরাপার্সন আরিফুল হক রনি, কালের কণ্ঠের মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি নাঈম হোসেন, দৈনিক রাজশাহী’র আলোর সম্পাদক আজিবার রহমান ও আজকের প্রত্যাশা’র রাজশাহী প্রতিনিধি নাজমুল হক। ঐ মামলার ১ নম্বর আসামী হিসেবে রয়েছে এরশাদ আলী নামে এক ঠিকাদারের নাম৷

ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা জানান, গত ২৬ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংক, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) শাখায় একটি জমি নিলামকে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনে সেখানে পৌঁছান সাংবাদিকরা। পরে প্রতারক আখতার’র সঙ্গে সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আখতার একজন সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

সাংবাদিকরা এ ঘটনায় মামলা করতে চাইলে শাহমুখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ মাছুমা মুস্তারী মামলা না নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন। এতে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তারা প্রতারক আখতার’র বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। পরে ওসি’র বিরুদ্ধেও বেশ কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রতারক আখতারুল ইসলামকে বাদী করে চাঁদাবাজি মিথ্যা মামলা নেয় ওসি।

সাংবাদিকদের দেওয়া অভিযোগে প্রতারক আখতারকে গ্রেফতার না করে পুলিশ তাকে দিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করায়। গত ২ সেপ্টেম্বর হওয়া প্রতারক আখতার’র করা মামলা শাহমুখদুম থানায় রেকর্ড করেন ওসি মাছুমা মুস্তারী। প্রতারক আখতারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের ৬ দিন পর এমন মামলায় রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ।

প্রতারক আক্তার অভিযোগ করেছেন, সাংবাদিকরা তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালানো হয়েছে। অথচ ঘটনার পূর্ণ ভিডিও প্রমাণ হিসেবে সবার কাছে রয়েছে, যা পুলিশও দেখেছে। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার নেপথ্য ঘটনায় ওসি’র নানা অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ। দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ আরএমপিতে কর্মরত ওসি মাছুমা মুস্তারী। অনিয়ম দূর্নীতি, মামলাবানিজ্যসহ মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

এদিকে এ বিষয়ে রাজশাহীর সাংবাদিক সমাজের ক্ষোভ বিরাজ করছে।সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, “সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। সেখানে উল্টো ভুক্তভোগী সাংবাদিকরাই এখন আসামি। এটি শুধু সাংবাদিক সমাজকেই নয়, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।” এ ঘটনায় বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।

এ বিষয়ে আরএমপি’র কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি’র মামলা সম্পর্কে আমি জানি। ঘটনার তদন্ত চলছে। কেউ নির্দোষ হলে তার নাম তদন্ত শেষে বাদ দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button