কোটায় নিজের ভর্তির গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগে মামলার ঘোষণা রাবি সমন্বয়ক আম্মারের

রাবি প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার নিজের প্রথম বর্ষে ভর্তির গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগ এনে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সামনে এই ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় তিনি নথি ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাবি’র উপাচার্য পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। ঐ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। তিনি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল ৭ জানুয়ারি পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে অফিসার-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরুল ইসলাম ঐ বিভাগের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। ডেপুটি রেজিস্ট্রারের বক্তব্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতেই ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তবে এর আগেই আগের দিনের বক্তব্যেল বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরুল ইসলাম।
এদিকে বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে প্রশাসনের ভবনের পশ্চিম পাশের লিচুতলায় দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন উপলক্ষ্যে সমাবেশ করছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে সালাহউদ্দিন আম্মারের প্রথম বর্ষে ভর্তির গোপন নথি বশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে দেখা যায়। এরপর সেটি সালাহ উদ্দিন আম্মারের হাতেও পৌঁছে। ঐ নথিতে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবির অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ‘মাদ্রাসার শিক্ষার্থী’র কোটায় ভর্তি হয়েছেন।
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘পোষ্য কোটার মতো একটা অযৌক্তিক জিনিস নিয়ে দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। এই আন্দোলনের কারণে পোষ্য কোটা বাতিল হয়েছে। আজকে দেখতে পাচ্ছি, আমার ব্যক্তিগত নথি ফাঁস করা হচ্ছে। পোষ্য কোটা বাতিল হওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে। গতকাল (মঙ্গলবার) আমার বিভাগ নিয়ে কটূক্তি করেছে। আজকে তারা তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত নথি যুক্ত করে দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অফিসার সমিতির যারা এই আন্দোলন পরিচালনা করছে, প্রতিটি সমিতির নামে আমি মামলা করব। এ ছাড়া আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের ষড়যন্ত্রের কারণে আমার নথি ফাঁস হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপন নথি নিয়ে তাকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।’
সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি যত দিন বেঁচে আছি, আগামী দিনে যদি আমার ওপর কোনো আক্রমণ আসে, তার দায়ভার এই অফিসার সমিতি, আইসিটি পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসা লাইনে পড়া থাকলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে সব শিক্ষার্থীই এই কোটায় ভর্তি হয়ে থাকে। এটা কোটা নয়, ওই শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত যোগ্যতা।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টর বলেন, ব্যক্তিগত গোপন নথি কীভাবে প্রকাশ্যে এলো? বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে। কেউ জড়িত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে।’ প্রক্টর বলেন, রেজিস্ট্রেশন ফরম শিক্ষার্থীর গোপন নথি, যা আইসিটি সেন্টার, একাডেমিক সেকশন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ একাধিক সেকশনে থাকে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মুক্তার হোসেন বলেন, ঐ শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত নথি প্রকাশ্যে দেখে তিনিও অবাক হয়েছেন। এটা তাদের কাজ নয়। হয়তো তৃতীয় কোনো পক্ষ কাজটি করে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সম্পর্ক অবনতি হয়।
এ বিষয়ে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা বলবো না। যদি এই অভিযোগ ঐ শিক্ষার্থী তুলেই থাকেন, তাহলে তিনি যেনো মামলা করেন। আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে।