বাঘায় পুলিশের বিরুদ্ধে দাবিকৃত টাকা না পেয়ে কৃষক লীগ নেতার ছেলের মোটরসাইকেল আটক ও ফেন্সিডিলের মামলা দেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পুলিশের বিরুদ্ধে কৃষকের মোটরসাইকেল আটক করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, দাবিকৃত টাকা না পেয়ে ঐ কৃষকের মোটরসাইকেল আটক এবং ফেনসিডিল মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বাঘা থানার দুই উপ-পরিদর্শকের (এস.আই) বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোত কাদিপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমানের ছেলে রুহেল ইসলাম রয়েল শুক্রবার (৭ জুন) বেলা ১১ টায় রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। উল্লেখ্য, রুহেল ইসলাম রয়েলের বাবা মজিবর রহমান বাঘা উপজেলা পাকুরিয়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে রুহেল ইসলাম রয়েল বলেন, বাঘা থানার এস.আই নুরুল ইসলাম ও শাহনেওয়াজ সজল বেশ কিছুদিন আগে এলাকায় গিয়ে তাকে বলেন, ‘যেহেতু তোমার বাড়ি বর্ডার এলাকায়। তুমি আমাদের এই এলাকায় কখন-কিভাবে অবৈধ মাদকের চোরাচালান হয়, সে সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আসামি গ্রেপ্তারে সহায়তা করবে। বিনিময়ে আমরা তোমাকে পুরস্কৃত করবো। কিন্তু তাদের কথায় রুহেল ইসলাম রয়েল রাজি না হলে তারা তাকে হয়রানি শুরু করেন। এরপর গত ১৪ মে সকাল আনুমানিক ১০টা থেকে ১১টার দিকে বাঘা থানার এস.আই নুরুল ইসলাম ও শাহনেওয়াজ সজল সহ আরেকজন তার বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার ভয় দেখান এবং তার ব্যবহৃত এ্যাপাচি ৪ভি লাল রংয়ের মোটর সাইকেলটি জোরপূর্বক বাড়ি থেকে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় আবারো বলেন, এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আসবি, নইলে তোর মোটর সাইকেল ফেরত পাবি না। তোদের নামে মামলা দিয়ে জীবন নষ্ট করে দিবো।
ভুক্তভোগী রুহেল ইসলাম রয়েল বলেন, তিনি পেশায় একজন কৃষক। পুলিশের দুই সদস্য কর্তৃক তার মোটর সাইকেল আটকের ঘটনার বিষয়ে তিনি গত ১৫ মে একটি লিখিত অভিযোগ বাঘা থানার পরির্দশক বরাবর দিতে গেলে তিনি অভিযোগটি গ্রহণ করেনি। উল্টো পুলিশ সদস্যরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং হুমকি দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সময় পুলিশ সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে মোটরসাইকেল ফেরত চান। কিন্তু তারা বলেন, এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যা, অণ্যথায় মোটরসাইকেল পাবি না। এসব ঘটনার কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি উল্লিখিত দুই এস.আই ও বাঘা থানার পরির্দশক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ২৯ মে প্রথম শ্রেণির আমলী আদালতে নালিশী মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রাজশাহীর এসপিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে আদালতে মামলার বিষয়টি জানার পর আসামি পুলিশ সদস্যরা এখন তাকে মামলা প্রত্যাহার ও এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে মোটর সাইকেল নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। অন্যথায় বিভিন্ন মামলা দিয়ে তাকে ক্রসফায়ারে মৃত্যুন ভয় দেখাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাঘা থানার এস.আই নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমার উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে হবে। একই কথা বলেন, অপর এস.আই শাহনেওয়াজ সজল। জানতে চাইলে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, সংবাদ সম্মেলনকারী রুহেল ইসলাম রয়েল একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা হয়েছে। এছাড়া আরও দু’টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন যাবত সে মাদক ব্যবসা করে আসছে। এবার মাদক চোরাচালান কালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ফেলে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনার সাক্ষ্যপ্রমাণসহ ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। পুলিশের বিরুদ্ধে রুহেল ইসলাম রয়েল আদালতে মামলা করেছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ রফিকুল আলম জানান, সে দীর্ঘ দিন ধরে মাদক ব্যবসা করে। তার বিরুদ্ধে মাদকের চারটি মামলা রয়েছে। পুলিশের খাতায় সে পলাতক। তার গডফাদার হচ্ছে নয়ন। আসামি রুহেল এবং তার গডফাদার নয়নকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।