স্কাউটস রৌপ্য ইলিশ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হলেন ড.শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্কাউটিংয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ধারাবাহিক নিরলস সেবা ও অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ স্কাউটস তাঁকে ২০২২ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ “রৌপ্য ইলিশ” অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড.শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী।
গত ২ জুন ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলননায়তনে বাংলাদেশ স্কাউটস কর্তৃক ২০২২ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ “রোপ্য ইলিশ ” অ্যাওয়ার্ড গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এঁর নিকট থেকে গ্রহণ করেন তিনি।
ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী ১৯৬৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার মালতীডাঙ্গা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মিজানুর রহমান ছিলেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক (অবঃ) এবং মাতা লুৎফুন্নেসা, বি. এ, বি-এড, এম. এ। তিনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা (অবঃ) ছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে অন্য স্থানে গেলে সন্তানদের সুরক্ষা এবং শিক্ষার বিঘ্ন ঘটবে এমন আশঙ্কায় তিনি তাঁর চাকুরীকালীন জীবনে পাওয়া সমস্ত পদোন্নতি পরিত্যাগ করেছিলেন। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামের জন্য তাঁর মাতা ২০২২ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক “স্বপ্ন জয়ী মা” সম্মাননা লাভ করেন। তিন বোন এবং এক ভাই এর মধ্যে, শরমিনের অবস্থান ২য়। তাঁর বড় বোন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ, ছোটবোন বর্তমানে প্রফেসর, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং একমাত্র ছোট ভাই এ্যাডভোকেট হিসাবে কর্মরত আছেন।
শরমিন ফেরদৌস চৌধুরীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় রাজশাহীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে তিনি ১৯৮০ সালে এসএসসি ও ১৯৮২ সালে স্বনামধন্য রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে পরিসংখ্যানে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৮৬ সালে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ২০০৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.ই.আর. থেকে শিক্ষায় পিএইচ. ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি ১৯৯৮ সালে পিএসসি’র মাধ্যমে মেধা তালিকায় ১ম হয়ে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে সরাসরি ৬ষ্ঠ গ্রেডে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সাপাহার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাপাহার, নওগাঁতে যোগদান করেন। রাজশাহীস্থ মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, গভ. ল্যাবরেটরী হাইস্কুল, রাজশাহী এবং সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহীতে তিনি দক্ষতার সাথে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়ে সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী উৎকর্ষতার এক অনন্য পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং উক্ত বিদ্যালয়টি বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সরকারি চাকুরী জীবনে তিনি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মালয়েশিয়া সফর করেন এবং সে সকল দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ পরিদর্শন করেন।
সফরকালীন লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের সরকারি বিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো সামাজিক বিজ্ঞান ল্যাব ক্লাস সরকারি প্রমথনাথ বিদ্যালয়ে স্থাপন করেন। ২০১২ সালে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং পদাধিকারবলে ২০১২ সালেই বাংলাদেশ স্কাউটস, রাজশাহী অঞ্চলের কমিশনার নিযুক্ত হন। বাংলাদেশ স্কাউটস এ যোগদানের পর থেকেই তিনি স্কাউট আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি অঞ্চলের বিভিন্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে নিজ উদ্যোগে কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন নানা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালার মধ্য দিয়ে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও ইভটিজিং, মাদক, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি সামাজিক সচেতনতায় নিজেকে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রেখেছেন।
স্কাউটার ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী গত ১৬ মার্চ ২০১৭ তারিখে স্কাউটিং এর দীক্ষা গ্রহণ করেন। ইউনিট পর্যায় থেকে আঞ্চলিক কমিশনার পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে স্কাউটিং এর বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পৃক্ত থেকে তিনি স্কাউটিং এর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি আঞ্চলিক কমিশনার হিসেবে ২০১২-২০১৮ পর্যন্ত এবং ২০১৯ থেকে অদ্যাবধি অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁর সুদীর্ঘ নেতৃত্বে অঞ্চলের অধিনস্থ ৮ টি জেলা এবং ৬৭ টি উপজেলায় স্কাউটিং এর গতিসঞ্চার হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শতভাগ স্কাউটিং এর স্বীকৃতি লাভ করে। অত্র অঞ্চলের অন্যান্য জেলাগুলোতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় অন্যান্য জেলাগুলোও শতভাগ স্কাউট জেলার স্বীকৃতি প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
তাঁর সক্রিয় সহযোগিতা ও নির্দেশনায় অঞ্চলের স্কাউট সদস্য ও লিডারের সংখ্যা বৃদ্ধি, দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বার্ষিক পরিসংখ্যান অর্জন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি, অনলাইন মেম্বারশীপ রেজিস্ট্রেশনে দেশের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন, এডাল্ট ইন স্কাউটিং বিভাগের সম্মাননা অর্জনসহ স্কাউটিং এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তাঁর একমাত্র কন্যা মাহদিয়্যাত মায়িশাহ খ্রী ষ্টার ওপেন স্কাউট গ্রুপ রাজশাহীতে ২৮ মার্চ ২০২২ সাল থেকে স্কাউট শাখায় একজন সক্রিয় গার্ল ইন স্কাউট হিসেবে সম্পৃক্ত আছেন।