বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ইআইআরপি প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পের কার্যক্রম বিষয়ক এক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার (২৬ মে) রবিবার বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রংপুর বিভাগের রংপুর সার্কেল অফিসের আয়োজনে বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়ামে অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমডিএ চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান।
সভায় বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। কৃষির উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে রোল মডেল। বাংলাদেশের উন্নত ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন। উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়ার অভিপ্রায়ে ভিষণ ২০৪১ কে সামনে রেখে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষির উন্নয়নকে আরো তরান্বিত করতে চান। যাতে করে কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপন করা হবে। ফলশ্রুতিতে আগামী দিনের কৃষি হবে পুরোপুরি যন্ত্রনির্ভর এবং ডিজিটালাইজড। প্রধানমন্ত্রী বরাবরই কৃষি সেক্টরকে ক্রিপাদৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন। তিনি আমাদের দুহাত খুলে দিয়েছেন। যে প্রকল্পের জন্য আজকে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি, সেই প্রকল্পটিও প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার উত্তরাঞ্চলের প্রতি অগাধ ভালবাসার উজ্জল দৃষ্টান্ত। সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- প্রকল্পের কার্যক্রম এসডিজি-২০৩০, জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা ২০২০, ৭ম ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, রূপকল্প ২০৪১, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশেতেহার ২০১৮, বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০, প্যারিস চুক্তি, ইউএনসিসিসি এবং জলবায়ু পরিবর্তনে অ্যাডাপ্টাশন এ সকল কিছুর অনেকগুলো লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ ছিল, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যা উত্তোরন করা গেছে। এখনও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমাদের সকলকে এগিয়ে যেতে হবে।
বিএমডিএ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ইআইআরপি প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খান, সেচ অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ নুর ইসলাম, রংপুর বিভাগের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ ওবায়দুর রহমান মন্ডল, বুয়েটের সিভিল প্রকৌশলী মোঃ মামুন ইসলাম ও রংপুর রিজিওনের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম মসিউর রহমান, বিএমডিএ সির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ সরকার, রংপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম সহ সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীগণ উপস্থিত ছিলেন।
রংপুর বিভাগের ৫টি জেলার ৩৫টি উপজেলায় ইআইআরপি প্রকল্পের অধীনে ৫ বছর মেয়াদি (২০১৯-২০২৫) প্রকল্পটি মূল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে ২৩০ কিলোমিটার খাল, ৯৮টি পুকুর ও ১০টি বিল পুনঃখনন করা হবে। জলাবদ্ধ জমির পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ১ হাজার হেক্টর জমি কৃষি কাজের উপযোগী করা যাবে। ১৩ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে পরিকল্পিত ও পরিমিত সেচ সুবিধা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বছরে ১ লাখ ১২ হাজার ২৪০ মেট্রিকটন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করা যাবে। এছাড়া ৫০টি সৌর শক্তি চালিত পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বঃপানি গ্রাহী ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ২১৩টি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা হবে। ২.৩০ লক্ষ ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপন করে অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি এবং পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা করা হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১৭০ কিলোমিটার খাল, ৮টি বিল ও ৬৭টি পুকুর পুনঃখনন সম্পন্ন হয়েছে। যার ফলে ভূ-উপরিস্থ পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সঞ্চিত-ধারণকৃত পানিদ্বারা খালের দু’পাড়ের প্রায় ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানসহ হাঁস ও মাছ চাষ ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃর হচ্ছে এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর পুনর্ভরণে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খাল পুনঃখননের ফলে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জলাবদ্ধ এক ফসলি কৃষি জমি ও প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আংশিক জলাবদ্ধ জমি জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়ে একাধিক ফসল চাষের উপযোগী হয়েছে। ৩০টি সৌর চালিত ও ১২৫টি বিদ্যুৎ চালিত অর্থাৎ ১৫৫টি এলএলপি স্থাপনের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমি, খালের পানিতে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি অর্থাৎ ৯ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে ২১৩ কিলোমিটার বারিও পাইপ লাইনের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানি দ্বারা পরিকল্পিত ও পরিমিত সেচের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বছরে প্রায় ৭৭ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫৪.৮০ কোটি টাকা। এক্ষেয়ে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে ও ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ হ্রাস পাচ্ছে। খালে পানি বছর ব্যাপি সঞ্চিত রাখার জন্য ৬টি সাবমার্জওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে খালে সঞ্চিত পানি প্রয়োজনে কৃষকগ্রুপ সম্পূরক সেচকাজে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি ১০টি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের ফলে মাঠের ফসল পরিবহণ ও জনগণের যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৮টি সুন্দর ও নান্দনিক জোনাল অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি গাইবান্ধা রিজিয়ন ও রংপুর বিভাগীয় অফিস ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ৩০টি সৌর চালিত এলএলপি ও ৫০টি সৌর চালিত ডাগওয়েল স্থাপনের মাধ্যমে সেচ কাজে নবায়নযোগ্য সৌর শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রায় ৭০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। প্রকল্প থেকে পাড়গুলোতে বিভিন্ন জাতের ১ লাখ ৯৮ হাজারটি ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। যা অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা, জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে সহায়ক হবে। এ সমস্ত নদী-নালা, খাল, বিল ও জলাশয়গুলো পরিকল্পিতভাবে খনন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এলাকায় ভূ-উপরিস্থ পানির আধার সৃষ্টি এবং সেচসহ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের এসব জেলায় খাল, বিল ও জলাশয়গুলো বিএমডিএ’র ‘ইআইআরপি’ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের আওতাধীন ৫টি রিজিওনের ৫০ জন কৃষক অবহিতকরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।