রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা করা হয়েছে। শনিবার (১৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় বিপুল সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দের উপস্থিতিতে নগরীর রাজারহাতা এলাকার পুরাতন সার্ভে ইনস্টিটিউটের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে ফেস্টুন উড়িয়ে এবং মাটি কেটে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। ইতোপূর্বে একই স্থানে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর ও বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক প্রয়াত অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। সেই ভিত্তিস্থাপনের ধারাবাহিকতায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ গতকাল (১৮ মে) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
এ উপলক্ষ্যে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পূর্বনির্ধারিত স্থানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রেজা হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুল হক বকু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুবুর রহমান, বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুশান্ত সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বদিউজ্জামান খায়ের, জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের ও রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু ও রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুর রশিদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের চক্রান্তে বিপথগামী ঘাতকের বুলেটে নিহত জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের নিহত সদস্যবৃন্দ, জাতীয় চার নেতাসহ ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু যেস্থানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, সেখানেই এর নির্মাণকাজ শুরু হলো। ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপু আজ আমাদের কাছ থেকে চির বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সংগ্রামী জীবনের অংশ হিসেবে এই কাজটিও আমাদের মাঝে চির অমর হয়ে থাকবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণকাজের শুভ সূচনার মধ্য দিয়ে আজ রাজশাহীবাসী ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষের প্রতি অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জানানোর পথ সুগম হলো।
বক্তারা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত কাজ করে চলেছেন, তখনও তাঁর বিরুদ্ধে দেশি বিদেশি চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সেগুলো মোকাবেলা করেই তিনি বাংলাদেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একথা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে গেলেই ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা চক্রান্ত করতে থাকে। এতো বছর পর রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হতে যাচ্ছে, এটা নিয়েও হয়তো সেই একই গোষ্ঠী ও তাদের দোসররা নানা চক্রান্ত করতে পারে। কিন্তু আমরা তা কোনোক্রমেই সফল হতে দেবো না।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার টেকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য যথাক্রমে মো. মাইনুল ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. তফিকুল ইসলাম, দীলিপ কুমার সরকার, মো. জনাব আলী, মো. আবু জাফর প্রাং, মো. মহিদুল ইসলাম, মো. আসাদুজ্জামান মাসুদ, শিউলী রানী সাহা, সুলতানা পারভীন রিনা ও মোসা. সাজেদা বেগম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে পুরাতন সার্ভে ইন্সটিটিউটের প্রায় ১ একর জায়গায় প্রায় ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নির্মিত হচ্ছে।