গোদাগাড়ীতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে স্বতন্ত্র ইউপি চেয়ারম্যানকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরে বাধ্য করার অভিযোগ

মব সৃষ্টিকারী অপরাধীদের নিকট থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া পদত্যাগপত্র উদ্ধার এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এক বিএনপি নেতা ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসুদেবপুর ইউপি’র স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলামকে মব সৃষ্টি করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি রাস্তার কাজের অনিয়মের অভিযোগ তুলে বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করা হয়। একপর্যায়ে বাইরে থেকে কম্পিউটারে টাইপ করে আনা পদত্যাগপত্রে ইউপি চেয়ারম্যানকে স্বাক্ষরে বাধ্য করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বেলা ১১টায় রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগী চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম ও ৮ জন মেম্বার এই অভিযোগ করেন। তারা মব সৃষ্টিকারী অপরাধীদের নিকট থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া পদত্যাগপত্র উদ্ধার এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাসুবেদপুর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়ে চেয়ারম্যান হিসাবে সুনামের সাথে এলাকার জনগণের সেবা করে যাচ্ছি। প্রতিদ্বন্দ্বী শফিকুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ মনোনীত) ও মাহফুজুর রহমান ডালিম (বিএনপি সমর্থিত) পরাজিত হন। নির্বাচনে তৃতীয় স্থান অধিকারী মাহফুজুর রহমান ডালিম গতবছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গোদাগাড়ী-তানোর আসনে বিএনপির জনৈক মনোনয়ন প্রত্যাশীর আশীর্বাদ ও মদদে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যা এলাকাবাসী অবগত আছেন।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘১৮ জুন আনুমানিক সাড়ে ১২টায় মাহফুজুর রহমান ডালিমের নির্দেশে তার আপন ভাই মোমিন, মফিজুর হক, তুহিন আলী, আল-মামুন, নবাব আলী, মোঃ নাজমুল, জহির, হুমায়ুন, আতিকুর রহমান টোটন, মোহন, দুলাল, সিফাত কবির আবির ও আবিদসহ একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক সন্ত্রাসী কায়দায় এলজিইডি’র রাস্তার কাজের অনিয়মকে ইস্যু করে ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে পূর্ব পরিকল্পিত ছকে সঙ্গে আনা কম্পিউটারে টাইপকৃত পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে তারা অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে স্বাক্ষর করবি না হয় জীবন হারাবি। আমি প্রাণনাশের ভয়ে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হই। এ সময় তারা ঘোষণা করে, আজ থেকে এই পরিষদের চেয়ারম্যান আমাদের মাহফুজুর রহমান ডালিম ভাই। স্থানীয় জনসাধারণ বিষয়টি গোদাগাড়ী থানা, সেনা ক্যাম্প ও উপজেলা প্রশাসনে অবহিত করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বে-আইনি জনতাকে ছত্র ভঙ্গ করে এবং আমাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে। কিন্তু তারআগেই তারা জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে আমাকে আমার কার্য্যালয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসন আমাকে তালাবদ্ধ কার্যালয় থেকে উদ্ধার করে আমার বাড়ীতে পৌঁছে দেয়।’

সংবাদ সম্মেলনে বাসুদবপুর ইউপির ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার আলফাজ উদ্দিন, ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম আরিফ, ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার কামরুজ্জামান, ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার ওহাব আলী, ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার লিটন, ১,২,৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড মেম্বার সাইদা খাতুন হীরা, ৪,৫,৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড মেম্বার সাবিনা ইয়াসমিন ও ৭,৮,৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড মেম্বার সুখ জাহান বেগমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান ডালিম বলেন, ‘এলাকার শত শত লোক ঐ ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন। যা আমি পরে জেনেছি। তবে ঘটনার সাথে আমি সম্পৃক্ত নই বা আমার যোগসাজস নাই। আমার পরিবারের কেউ সেখানে ছিলেন না।

গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। যারা চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করেছিল তারা ইউএনও অফিসে যায়। সেখানে তারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অীভযোগ করেন। ইউএনও তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। বিষয়টি ইউএনও ভাল বলতে পারবেন।

জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং এলাকাবাসী (জোর করে পদত্যাগে বাধ্যকারী) পৃথক অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button